My first post

This is my website . Welcome everybody to my new website. Here there are some necessary things of yours.

তুমি এসেছিলে বলে...

 তুমি এসেছিলে বলে... 




১ম পর্ব
বে মাত্র নবম শ্রেণিতে পদার্পন এর মধ্যে শুরু হল মনের গহীনে কোমল এক অনুভূতির আগমন। সবকিছু যেন নতুন করে দোল খাচ্ছে মনে। আর এই সব কিছুর পিছনে লুকিয়ে আছে এক সুন্দরী রমনী।
চণ্ডীদাস ও রজকিনীর প্রেম কাহিনীর মত পুকুরের এক পাশে বসে থাকত সজীব ( বলায় বাহুল্য গল্পের প্রধান চরিত্র) অন্য প্রান্তে সেই সুন্দরী রমনী আসত তার থালা-বাসন নিয়ে ধৌত করার জন্য। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত সজীব আর অন্য দিকে শিমু (সুন্দরী রমনী) আড়চোখে দেখত আর নিজের কাজে মনোনিবেশ করত। এভাবে দিনের পর দিন চলতে লাগল। কেউ কাউকে কিছু বলতে হবে এমন ভাবও কারো কাছে নেই। একজন আরেক জনকে দেখলেই  ভালোলাগে শুধু এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পাশাপাশি বাড়ি হওয়াতে দু'বাড়ির মহিলারা বিকেল বেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তর মতই সীমান্তে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প গুজব করত। আর এই সুযোগটা সজীব ও শিমু মিস করত না তারা নিরব দর্শকের মত দাড়িয়ে একজন আরেকজনকে দেখত।
তবে চোখাচোখি হলেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিত আর মুচকি মুচকি হাসত। 

২য় পর্ব
জীব পড়াশোনায় মেধাবী ছিল। সজীব ও শিমু কিন্তু একই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। সজীব শিমুর চেয়ে দু ক্লাস সিনিয়র ছিল। একবার সজীব নবম শ্রেণিতে থাকা কালীন একটা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রগণ করে। পরীক্ষার ফলাফল কখন দিবে এই বিষয়ে সজীবের কোন ধারনা ছিল না। কারণ স্যারেরা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে বলছে তাই দেওয়া। হঠাৎ  একদিন বিদ্যালয়ে  যখন সমাবেশ (পিটি) করার জন্য সবাই লাইনে দাড়ালো তখন প্রধান শিক্ষক ঘোষণা দিলেন, আমাদের বিদ্যালয় থেকে দুজন বৃত্তি পেয়েছে একজন সজীব ও অন্যজন রায়হান ( সজীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু)।  প্রধান শিক্ষক সবার সামনে দুজনের হাতে পুরষ্কার তুলে দিল। লাইনে দাঁড়িয়ে শিমুও সেই দৃশ্যটা দেখল। সজীব বাড়িতে আসার আগেই শিমু বাড়িতে এসে সবাইকে খবরটা দিয়ে দিল। সজীব বাড়িতে এসে সবাইকে বলার আগেই সবাই তাকে অভিনন্দন দেয়া শুরু করল। সজীব কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল আপনারা কিভাবে জানলেন? তখন সবাই বলল শিমু নাকি তাদের খবরটা জানিয়েছে। দুজন দুজনের প্রতি আরো দুর্বল হতে লাগল। এভাবে দেখতে দেখতে সজীব এস এস সি পরীক্ষা পাশ করে ফেলল। এখনও কেউ কাউকে ভাল লাগার কথা বলতে পারেনি। সজীব কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য শহরে পাড়ি জমালো। 

৩য় পর্ব
লেজ বন্ধ হলেই সজীব গ্রামে চলে আসত আর চন্ডীদাসের মত পুকুরের পাড়ে বসে থাকত। শিমুও যথারীতি পুকুরে এসে যখন সজীবকে দেখত তখন আনন্দে দিশেহারা হয়ে যেত। বারবার নানা কাজে পুকুরে আসতে থাকত। দূর থেকে তাদের মধ্যে অন্য রকম এক রসায়ন জমে উঠত। এভাবে চলতে থাকত যতদিন সজীব গ্রামে থাকত। এই ঘটনাগুলো মোবাইল যুগের আগের কথা। তখন এলাকায় শুধু যারা মোবাইল ব্যবসা করত তাদের কাছেই মোবাইল ছিল। বিদেশ ছাড়া লোকাল কল খুব কমই আসত। বিদেশ থেকে কারও কল আসলে পুরো এলাকা খবর হয়ে যেত। যাদের কল আসবে তাদেরকে আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হত আজ এতটা বাজে আপনাদের কল আসবে। সবাই তখন সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করত। মাঝে মাঝে লাইন পাওয়া যেত আবার মাঝে মাঝে পাওয়া যেত না। তখনকার সময়ে এক টাকার ও অনেক মূল্য ছিল। সে সময়ে বিদেশ থেকে কল আসলেও প্রতি মিনিটে ৫০-৬০ টাকা নিত। লোকাল কল মিনিটে ১০ টাকা ছিল। মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা নেই বললে চলতো। এখনকার মত মোবাইল তখন এত সহজলভ্য ছিল না। থাকলে সজীব আর শিমুর যোগাযোগটা হয়ত সহজ হত। যাহোক কোন রকম কথার বিনিময় ছাড়া সজীব আবার শহরে চলে 
গেল। কলেজে যতক্ষণ থাকত ততক্ষণ ক্লাস আর বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্ত বাসায় আসলে বিকেল বেলা আবার শিমুর কথা মনে পড়ত। কখন আবার কলেজ বন্ধ হবে আর সোজা এক দৌড়ে বাড়িতে যাবে। 


৪র্থ পর্ব

একবার রমযানের বন্ধে সজীব বাড়ি আসল। সেই বার ঘটল অন্য এক ঘটনা। শিমুর বড় বোনও শিমুদের বাড়িতে বেড়াতে আসল। শিমুর বড় বোনের দুই ছেলে। একটার বয়স দশ, আরেকটা বয়স ছয় কি সাত। তারা বেড়াতে আসলে সজীবের বাড়িতে খেলতে আসত। সজীব এর সাথে ওদের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে ছোটটার সাথে। একদিন সজীব একটা চিরকুট লিখল শিমুকে দেওয়ার জন্য কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ মনে হল শিমুর ভাগ্নে ছোটটাকে দিয়ে পাঠালে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। দোকান থেকে প্রথমে কয়েকটা চকলেট নিয়ে আসল।তারপর শিমুর ছোট ভাগ্নেকে ডেকে প্রথমে চকলেট দিল। সে তো চকলেট পেয়ে মহা খুশি। তারপর সজীব বলল তোমাকে আমি আরও চকলেট দিব তার আগে এই কাগজটা তোমার শিমু খালামনিকে দিবে। সে কাগজটা নিয়ে এক দৌড়ে বাড়িতে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে সবার সামনে শিমুকে বলল এটা তোমাকে সজীব মামা দিতে বলছে৷ সবাই কিছু বোঝার আগেই শিমু ব্যপারটা বুঝতে পেরে নিজের মত করে সবাইকে যা তা একটা বুঝিয়ে দিল। ঐদিকে সজীব রাস্তায় পায়চারি করছে কখন ছেলেটা আসবে। ছেলেটাও যথারীতি তার চকলেটের আশায় আবার চলে আসল। সজীব ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল তুমি কাগজটা তোমার খালামনিকে দিছ? ও বলল-হ্যা। সজীব আবার জিজ্ঞেস করল আর কেউ ছিল ওখানে? ও বলল-হ্যা। কি! সজীব তো এবার টেনশনে পড়ে গেল। না জানি কি থেকে কি হয়ে যায়। 

একদিকে ভয় কাজ করছে অন্য দিকে নিজের মনের কথা শিমুকে বলতে পেরে ভাল লাগছে। তারপর থেকে সজীব অপেক্ষা করতে লাগল কখন চিরকুটের উত্তর আসবে। কিন্তু চিরকুটের কোন উত্তর দিল না শিমু। কিন্তু আগের মতই সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল। সজীব কিছু বুঝতে পারল না শিমু অনুভূতির কথা। যাহোক রমযানের বন্ধ শেষে সজীব আবার শহরে চলে গেল। 


৫ম পর্ব


দীর্ঘ ২ মাস পর আবার কোরবানের বন্ধ দিল কলেজ। এবার বাড়ি এসে সজীব যা শুনল তার জন্য সে মুটেও প্রস্তুত ছিল না। মনটা ভীষণ খারাপ হল তার৷ একদিকে এখন পর্যন্ত তার মনের কথা ভাল করে বলতেও পারল না শিমু কে, তার উপর এমন একটা খবর, সজীব কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। শিমুদের ঢাকায় নিজস্ব জায়গা আছে তারা কোরবানির ঈদের পর স্ব-পরিবারে একেবারের জন্য সেখানে চলে যাচ্ছে। সজীব কি করবে কিছুই ভাবতে পারছে না। কেমন জানি শূন্যতা কাজ করছে। শিমুর এক চাচাতো বোন ছিল নাম তার তানিয়া। তানিয়া দেখতে অনেক সুন্দরী ছিল। সে আবার একটা ছেলের সাথে প্রেম করত আর তাদের প্রেমের একমাত্র স্বাক্ষী ছিল সজীব।  কারণ সজীব তাদের পত্র বাহক ছিল। তানিয়া সজীবকে ছোট ভাইয়ের মত জানত। হঠাৎ তানিয়া একদিন সজীবকে বলল কি ব্যপার ভিতরে ভিতরে এতদূর আমি তো কিছুই জানি না। সজীব বলল কি আপু? কোন বিষয়ে?

কেন কিছু জাননা বুঝি? শিমু আমাকে সব বলেছে। সজীব কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জা নিয়ে সজীব আবার জিজ্ঞেস করল, কেন কি বলেছে শিমু? তানিয়া বলল সেটা না হয় তুমি পড়ে নিও। সজীব বলল মানে। মানে শিমু এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলল। সজীব তো আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেল। এতদিন এতমাস পর শিমু তার চিরকুটের উত্তর দিল। সজীব আর বিলম্ব না করে এক দৌড়ে বাসায় গিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করল।


৬ষ্ঠ পর্ব 

সজীব চিঠিটা যে কত বার পড়েছে তার কোন হিসেব নেই। চিঠির  কথাগুলোর সাথে সাথে নিজেকে আর শিমুকে নিয়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে বারবার।

শিমুর চিঠির ভাষা ছিল এক একটা ছন্দের গাঁথুনি। বিভিন্ন উপমা দিয়ে সাজানো প্রতিটি লাইন। এত সুন্দর করে শিমু চিঠি লিখতে পারে তা সজীবের জানা ছিল না। সজীব কে যে  শিমুর অনেক আগেই ভাল লেগেছে তা চিঠিতে সোজাসোজি জানিয়ে দিল। কিন্তু ভয়ে এবং সুযোগের অপেক্ষায় এতদিন প্রকাশ করতে পারে নি। কিন্তু আজ কেন প্রকাশ করল? তা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আরেকটু পিছনে। শিমুর বাবা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তারা একেবারের জন্য ঢাকায় চলে যাবে। আর কখনও গ্রামে ফিরেে আসবে না। তাই তারা নিজেদের সব সম্পত্তি এমনকি ঘরসহ বিক্রি করে দিল। ঘর বিক্রি করার কারণে আর যতদিন ছিল ততদিন তার চাচার ঘরেই ছিল। সে সুবাদে শিমু রাতে ওর তানিয়া আপুর সাথে ঘুমাতো। এর আগে কখনও ওর তানিয়া আপুর সাথে এত ক্লোজ ছিলনা। রাতে দুজন নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে সজীবের প্রতি শিমুর দুর্বলতা বুঝতে বাকি রইল না তানিয়ার। তারপর শিমু সব খুলে বলল তানিয়াকে। তানিয়া কিন্তু এ বিষয়ে অনেক দক্ষ কারণ তাদের প্রেম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই সে শিমুকে বলল তুই চিঠি লেখ, সজীবকে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার দ্বায়িত্ব আমার।

যার কারণে শিমুর আজ সব ভয় কেটে গেল। এতদিন শিমু চিঠির উত্তর দেয় নাই আর আজ চিঠি

দেওয়ার পর থেকে শিমুর ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে কখন সজীব থেকে চিঠির উত্তর আসবে। তানিয়া বারবার এসে জিজ্ঞেস করছে কই চিঠির উত্তর কই।

ইতিমধ্যে সজীব ও চিঠি লিখে ফেলছে। এতদিন সজীব ছিল তানিয়ার পত্র বাহক আর আজ তানিয়া সজীব এর পত্র বাহক। শিমু এত বেশি excited যে সকাল বিকেল দুটো করে চিঠি আদান প্রদান করা শুরু করল। একদিন তানিয়া, শিমু ও শিমুর বড় ভাই সহ রাস্তায় বের হল, বের হওয়ার সময় তানিয়া সজীবকে ইশারা করেছিল তাদের সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু সজীব ব্যপারটা ভাল করে বুঝতে পারে নি। আর শিমুর ভাই থাকাতে সজীব একটু ইতস্তত বোধ করেছিল। কিন্তু শিমু ভীষণ রেগে গেল সজীব এর উপর। সে চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিল৷ সজীব তানিয়াকে জিজ্ঞেস করল শিমু কোন চিঠি দিচ্ছে না কেন? সে বলল, তুমি গতকাল না আসাতে শিমু ভীষণ রাগ করছে। সজীব বলল ওর বড় ভাই থাকাতে আমি যায় নি। যাহোক ব্যপারটা তানিয়া শিমুকে ভাল করে বুঝিয়ে বলাতে রাগটা কমলো।


৭ম পর্ব


পরের দিন সজীবের আম্মু তাকে নিয়ে নানার বাড়ি যাওয়ার কথা বলল। সজীব নানার বাড়ির এত পাগল হওয়া সত্বেও আজ নানার বাড়ি যেতে চাচ্ছে না। সে তার আম্মুকে বলল একা একা চলে যেতে। কিন্ত এতদুর পথ একা যাওয়া সম্ভব নয়।তিনি জোর করে সজীবকে নিয়ে তার নানার বাড়ি গেল। নানার বাড়িতে সবাই সজীবকে তার মন খারাপের কথা জানতে চাইল কিন্তু সে কারও সাথে ভাল করে কথাও বলছে না। বারবার বলছে আমি বাড়িতে চলে যাব। বাধ্য হয়ে সবাই বলল আচ্ছা ঠিক আছে কালকে যাচ, এখন তো রাত হয়ে গেছে। কিন্তু সজীবের কোন মতেই মন টিকছে না। পরের দিন সকাল হতে না হতে সজীব বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগল। সবাই নিষেধ করা সত্বেও তুমুল বৃষ্টির মধ্যে সজীব হেঁটে হেঁটে ৫-৬ কিমি পাড়ি দিয়ে বাড়ি চলে আসল। বাড়ির অন্যান্য লোকেরা অবাক হয়ে গেল এত বৃষ্টির মধ্যে কেন ওর নানা-নানি ওকে আসতে দিল। কিন্তু সজীব যে কারও কথা না শুনে একা চলে আসছে সে কথা কি আর তারা জানে।

ঐদিন বিকেল বেলা শিমু আর তানিয়া কিছু শুকনো মরিচের নাম দিয়ে সজীবদের ঘরে আসে। শিমু সজীবদের বাড়িতে আসে না বললেই হয়। তবে তানিয়া সকাল বিকেল না আসলে তার চলেই না। তানিয়াকে সবাই অনেক পছন্দ করে। সে এসে সজীবের চাচিকে জিজ্ঞেস করল চাচি শুকনো মরিচ আছে? সজীবের চাচি বলল- হ্যা আছে। সজীবের চাচি  তখন রান্না করছিল। তিনি তানিয়াকে বলল তুই বস এখানে আমি এনে দিচ্ছি। তানিয়া বলল তুমি উঠতে হবেনা শুধু কোথায় আছে বলো। তানিয়ার সব মুখস্ত আছে। এই সুযোগে শিমু আর তানিয়া রান্না ঘর থেকে মেইন ঘরে প্রবেশ করল। এই প্রথম শিমু আর সজীব এত কাছাকাছি এসেছে। তানিয়া তাদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। সজীব ও শিমু লজ্জায় কেউ কাউকে কিছু বলতে পারছে না। সজীব ইতস্তত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল - কেমন আছ? শিমু ভাল আছি বলতে না বলতে লজ্জায় এক দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। তারপর সজীবের চাচির সাথে রান্না ঘরে বসে বসে শিমু আর তানিয়া কথা বলছে আর সজীবও একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দেখছে। কিছুক্ষণ থাকার পর তারা চলে গেল।


পরের দিন সজীব আবার একটা চিঠি পাঠালো। চিঠি র সারমর্ম এই ছিল আগামী দিন সে শহরের উদ্দেশ্য চলে যাবে আর কখনও তাদের দেখা হয় কিনা কে জানে। কারণ শিমুরাও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে একেবারের জন্য ঢাকায় চলে যাচ্ছে। তাই শিমুর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যায় সে ব্যপারে জানতে চাইল।


শিমুও চিঠির উত্তর দিল- পৃথিবী তো গোলাকার হয়ত ঘুরতে ঘুরতে কোন একদিন দেখা হয়ে যাবে।আর যোগাযোগ করার জন্য ঢাকার একটা ঠিকানা দিল। সজীবকে খুব মিস করবে আর কখনও ওকে ভুলতে পারবে না। কারণ সজীবকে সত্যি সত্যি অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছে। 



পরের দিন সজীব শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিল। সজীব যখন যাচ্ছিল শিমু তখন করুণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বাড়ির সবাই থাকার কারণে কেউ কাউকে ইশারাও করতে পারল না। শুধু নিরব দর্শকের মত তাকিয়ে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সহ্য করে যাচ্ছিল। সজীব আর শিমুর এইটা ছিল শেষ দেখা।

আর কখনও তাদের দেখা হয়নি।


সজীবের গল্পটি রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মত এখানে শেষ হতে পারত। কিন্তু কে জানত, আমরা  যেখানে গল্পের ইতি টানার জন্য প্রস্তুত হয়েছি সেখানে আদৌ গল্প শুরুই হয়নি।


৮ম  পর্ব


সজীব এইচ এস সি পাশ করে মেইন সিটিতে চলে গেল। এর আগে যেখানে থাকত সেটা ছিল কিছুটা গ্রাম ও শহরের মিশ্রণ। শহরে নতুন এক মেচে উঠল যেখানে তার একজন নিকট আত্মীয় ছিল সম্পর্কে চাচা। যাহোক সিটির সব পথ-ঘাট তার অচেনা।


 বিকেল বেলা হলে ঘুরে ঘুরে শহরের পথ-ঘাট চেনার চেষ্টা করত। সজীব জানতে পেরেছে তার বাল্যকালের এক বন্ধু (সামির) একই এলাকায় থাকে তবে সে কোন ঠিকানা জানে না। 

 

প্রতিদিনের মত একদিন বিকেল বেলা হাটতে বের হল সজীব। অলি গলি হাটছে আর মনে মনে ভাবছে যদি সামিরের সাথে দেখা হয়। সত্যি সত্যিই সিনেমার গল্পের মতই হঠাৎ সামির তাকে ডাক দিল স-জী-ব। 


সামিরকে পেয়ে সজীবের সে কি আনন্দ। কারণ এই সামির হচ্ছে বাল্যকালের সজীবের সবচেয়ে ভাল বন্ধু। ছোট বেলায় সামিরদের বাড়িতে সজীবেরা ভাড়া থাকত। সামিরদের বাড়ি মেইন সিটি থেকে ১৫-২০ কিমি দূরে। 


সজীবের বাবার চাকরির সুবাদে তাদের সে বাড়িতে থাকা। সামিরদের বাড়ির পাশে একটা প্রতিষ্ঠানে সজীবের বাবা চাকরি করতেন। সজীব ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ঐ বাড়িতে ছিল৷ তারপর তার বাবা রিটায়ার্ড করলে ওরা সপরিবারে গ্রামে চলে যায়। তারপর থেকে সামিরের সাথে আর দেখা হয়নি। 


সজীব কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য যখন শহরে আসল তখন আবার দুজনের দেখা হল। কিন্তু সজীব আর সামিরের কলেজ ছিল ভিন্ন এবং সামির সজীবের এক ব্যাচ সিনিয়র ছোটবেলা থেকে । সামির মেইন সিটিতে একটা কলেজে পড়ত। 


সজীব আর সামিরের বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে একটা উপন্যাস লিখা হয়ে যাবে। যাহোক দুজনে এত বছর পর দেখা হওয়ার আনন্দে মেতে উঠল। সামির সজীবকে তার মেচে নিয়ে গেল। মেচের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর থেকে শুরু হল দু বন্ধুর নতুন করে পথ চলা।


দুজনে এক বছরের ব্যবধানে এইচ এস সি পাশ করলেও এখন কিন্তু তারা একই সাথে। কারণ সামির তখনও কোথাও ভর্তি হয়নি। দুজনে সামনে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুজনে শহরে একই এলাকায় থাকার কারণে সকাল বিকেল এক সাথে আড্ডা দিত।


প্রতিদিন বিকেল বেলা সজীব আর সামির হাঁটতে বের হত। হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা অনেক বড় পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসত৷ মূলত ঐটাই ছিল তাদের আড্ডার জায়গা। এখানে বসে বসে নিজেদের অতীতের দিনগুলো শেয়ার করত। বেশির ভাগ ছোট বেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে করত। আর ভাবত অনেক মজার ছিল সেই দিনগুলো। 


তারপর সজীব তার হাইস্কুল জীবনের কথা বলতে গিয়ে শিমুর কথা বলতে শুরু করল। সজীবের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প শুনে সামির খুব হতাশ হল।

সে সজীবকে বলল তুই এক কাজ কর, শিমু যে ঠিকানাটা দিয়ে গেছে ঐ ঠিকানায় একটা চিঠি দে।

যে কথা সেই কাজ। সজীব একটা চিঠি লিখল। আর দুজনে মিলে পোস্ট অফিসে গিয়ে সেটা পোস্ট করে দিল। দিন যায় মাস যায় কিন্তু চিঠির উত্তর আসে না। 

চিঠিটা আদৌ পৌঁছেছে কিনা সে ব্যপারেও অনিশ্চিত। তারপরও সামির আরেকটা দিতে বলল।

সজীবও সামিরের কথা শুনে আরও দু-একটা দিল কিন্তু চিঠির কোন উত্তর আসে না। সজীব হতাশ হয়ে চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিল।


৯ম পর্ব


এদিকে সজীব ও সামিরের ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা আরম্ভ হল। দুজনে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করলেও পছন্দ মত বিষয় কেউ পেল না। সামির আর দেরি না করে নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেল কারণ ওর ইতিমধ্যে এক বছর লস হয়ে গেছে। কিন্তু সজীব কি করবে বুঝতে পারছে না। 


 পরে সামির তার ভার্সিটিতে সজীবের পছন্দের বিষয় আছে বলে জানাল। সামির পরামর্শ দিল তার ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। সামিরের এক সেমিস্টার পর সজীবও ভর্তি হল একই ভার্সিটিতে অন্য ডিপার্টমেন্টে। এই প্রথম দুই বন্ধু একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এর আগে কখনও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া হয়নি। 


দু'জনের ক্লাস সিডিউল মিলে গেলে একসাথে যেত না হয় আলাদা আলাদা যেত ভার্সিটিতে। তবে আসার সময় এক সাথেই আসত। যার আগে শেষ হত সে অন্যজনের জন্য অপেক্ষা করত। আর ক্লাস না থাকলে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিত। 


যার যার ডিপার্টমেন্টের আলাদা আলাদা বন্ধু থাকা সত্ত্বেও ওরা দুজনে একসাথে আড্ডা দিত। সজীব আর সামিরের বন্ধুত্ব যে বেশ গভীর সেটা বুঝতে বাকিদের আর সময় লাগল না। সামিরের ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের সাথেও সজীবের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। 


সবাই মিলে ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়া তো ছিলই তার সাথে যোগ হল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখা। নতুন সিনেমা আসলেই যেকোন হলে গিয়ে সিনেমা দেখাটা তাদের নেশা হয়ে গেল। সজীব আর সামির আগে কখনো সিগারেট খেত না কিন্তু ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে দিতে সিগারেটের অভ্যাস গড়ে উঠল। তবে তারা কখনও প্রফেশানাল ধূমপায়ী ছিল না। শুধু আড্ডা দেওয়া সময় সিগারেট খেত। কেউ কখনও বলতেও পারবে না যে তারা ধূমপান করে। কারণ তারা সবসময় ধূমপান করে চকলেট বা চুইংগাম খেত যাতে মুখে কোন গন্ধ না থাকে।দেখতে দেখতে সজীবের ১ম সেমিস্টার শেষ হল। আর সামিরের শেষ হল ২য়। 


সামিরের ১ম সেমিস্টারের পর তার হাতে প্রথম মোবাইল আসল। মোবাইলটি পাঠিয়েছে তার বড় ভাই। সামিরের বড় ভাই আবার ইউরোপের একটা দেশে থাকত। নতুন মোবাইল পেয়ে সামির খুব উচ্ছসিত। সামির মোবাইলটা প্রথমে সজীবকে দেখাল। 


তখন থেকে মোবাইল আস্তে আস্তে সহজলভ্য হতে শুরু করলেও মোবাইলে গান শোনা,গেমস খেলা আর কথা বলা ছাড়া তেমন কোন ফাংশন ছিল না। ফেইসবুক তখনও আবিষ্কার হয়নি। ইন্টারনেট কি জিনিস কেউ জানতই না। মোবাইলে ৫১২ এমবির মেমোরি কার্ড মানে বিশাল কিছু। অনেক অডিও ও ভিডিও ফাইল ধারন করা যেত। আর সেগুলোই ছিল মোবাইলের একমাত্র বিনোদন। 



বেশ কিছু দিন পর সজীবের বড় ভাই  নতুন মোবাইল

কেনার কারণে পুরনোটা সজীবকে দিয়ে দিল। এতে সজীবতো বেজায় খুশি। মোবাইলের কোন ফাংশনই তার জানা ছিল না। সামির থেকে সব শিখে নিল।


তখন মোবাইল কিছুটা সহজলভ্য হলেও মোবাইলের কল রেট ছিল বেশ চড়া। ১ মিনিটে ৭টাকা কেটে ফেলত। সজীব আর সামির প্ল্যান করল তারা একজন আরেক জনকে কল দিবে না।


মিস কলের মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানান দিবে। ১টা মিস কল দিলে একরকম ইংগিত, পর পর ২টা মিস কল দিলে আরেক রকম ইংগিত। আর কিছু না বুঝলে তখন গিয়ে কল দিবে এরকম প্ল্যান করেই তারা মোবাইলের ব্যবহার করত। বেশ কাজ দিয়েছিল তাদের এই প্ল্যান। এতে তাদের অনেক টাকা সেভ হত। কারণ তখন মোবাইলে একসাথে  সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা ঢুকানো লাগত তাও আবার মেয়াদ ছিল ২১ দিন। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ কাউকে কল দিতনা বললেই চলে। 


১০ম পর্ব 


হঠাৎ এক রমযানে সকাল ৮ টার দিকে সজীবের মোবাইলে  একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। সজীব হ্যালো বলতেই ফোন কেটে দিল।

কিছুক্ষণ পর আবার কল দিলো। এবার হ্যালো বলার পর সজীব কিনা কনফার্ম হওয়ার জন্য তার পরিচয় জানতে চাইল। সজীব বলল- হ্যা আমি সজীব।


ততক্ষণে সজীব ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মেয়েটির কন্ঠ বুঝতে আর বাকি রইল না। সজীব জিজ্ঞেস করল- কেমন আছো? মেয়েটি অবাক হয়ে বলল আপনি আমাকে চিনছেন। সজীব বলল এত বছর ধরে তো এই একটা কন্ঠের অপেক্ষায় ছিলাম।

ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছে জিজ্ঞেস করাতে বলল তার বড় ভাইয়ের মোবাইল থেকে। তার বড় ভাই এর ভিতরে একবার গ্রামে এসেছিল বেড়াতে। সজীব তখন তার নতুন নাম্বারটা তাকে দেয় পরবর্তীতে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল নাম্বারটা যাতে শিমুর কাছে পৌছায়। যাহোক সজীবের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সজীব এই আনন্দ সামিরের সাথে শেয়ার করল। সামিরও খুব খুশি হল।


এরপর থেকে প্রতিদিন একই সময়ে কথা হত। সজীবের যখন তখন কল দেওয়া নিষেধ ছিল। কারণ 

শিমু নিজে মোবাইল ব্যবহার করত না। প্রাইভেট পড়তে আসলে তখন বান্ধবীদের মোবাইল থেকে কল দিত। আর সজীবও সে সময়ের অপেক্ষায় থাকত। সজীব একদিন জিজ্ঞেস করল, " তুমি কি আমার চিঠি পেয়েছে? " শিমু বলল, "হ্যা পেয়েছি "

সজীব বলল, " তাহলে উত্তর দাও নি যে?" শিমু বলল,  " চিঠি আমার হাত পর্যন্ত পৌছাতো না। চিঠি বড় ভাইয়া পেয়ে যেত। আর বাসার সবাই মিলে আমাকে অনেক বকা-ঝকা করত। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ঠিকানাটা সংগ্রহ করার জন্য কিন্তু পারিনি। শেষ বারেরটা পেয়ে একেবারে রেগে গেছে। বলছে আর একটা যদি আসে তাহলে তোমার আব্বু -আম্মুকে জানাবে। ভাগ্যিস তুমি আর দাও নি " সজীব বলল, "আমি মনে করেছি ঠিকানা হয়ত ভুল।তাই হয়ত তুমি চিঠি পাওনি।"


এভাবে সজীব আর শিমুর কথাবার্তা চলতে লাগল। সজীব আর শিমুর কথাবার্তা শুনে সামিরের ফোনে কারও সাথে কথা বলার সাধ জাগল। সে সজীবকে বলল শিমুর কোন বান্ধবীর নাম্বার দিতে। সজীবও বন্ধুর অনুরোধে শিমুকে বলল," আমার এক বন্ধু আছে সামির। তোমার কোন বান্ধবী থাকলে তার নাম্বার দাও" শিমু বলল," কেন? প্রেম করবে নাকি?"

সজীব বলল, "না, এমনি কথা বলবে। পরে একজনকে অন্য জনের ভাল লাগলে সেটা ভিন্ন বিষয় " শিমু বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে। আমি পরে জানাব।"


১১তম পর্ব 


কয়েকদিন পর শিমু একটা নাম্বার দিল। বলল এটা ওর কাজিনের নাম্বার। সজীবও সেটা সামিরকে দিল। সামিরের সাথে শিমুর কাজিনের কথাবার্তা বেশ জমে উঠল৷ সজীব আর সামিরের মধ্যে পার্থক্য ছিল সজীব introvert আর সামির extrovert। সামির কথাবার্তায় খুব পটু। খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিমুর কাজিনকে তাদের মধ্যে ভাব জমে উঠল। সজীব আর শিমুর চেয়ে সামির আর শিমুর কাজিনের কথাবার্তা বেশি হত। 


সজীব যখন শিমুর ব্যপারে দিন দিন সিরিয়াস হতে লাগল শিমু তত দূরে সরতে লাগল। আগের মত কল করা বন্ধ করে দিল। সজীব জানতে চাইলে নানা সমস্যা বলে পাশ কেটে যেত।


সজীব এর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিলো না। শিমু যে নাম্বার থেকে কল দিত সেটা কথা বলার পরে বন্ধ থাকত তাই সজীব চাইলেও যখন তখন কল দিতে পারত না। শিমু আস্তে আস্তে কল দেওয়া কমাতে কমাতে সত্যি সত্যি কল দেওয়া বন্ধ করে দিল।


সজীব কোন কিছু বুঝতে পারছে না কেনই বা এতদিন পর যোগাযোগ করল আবার বন্ধ করে দিল। সজীব সামিরকে সব বলল। এরপর শিমুর কাজিন থেকে বিষয়টা জেনে নিতে বলল। শিমুর কাজিন যদিও কিছু বলতে চায়নি, কিন্তু সামিরের বিচক্ষণতায় সব তথ্য বের করে নিয়ে আসল। 


শিমুর কাজিন বলল," প্রথমত শিমুর নিজের মোবাইল আছে। দ্বিতীয়ত তার এখানে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। সে শুধু সজীবের সাথে মজা নেওয়ার জন্যই কথা বলেছে। আর শিমু কখনো গ্রামে যাবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি "। 


সজীব যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সামির নিজেও অবাক এ কেমন সম্পর্ক ছিল সজীব আর শিমুর মধ্যে। সামির সজীবের অবস্থা বুঝে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। শিমু তাকে নিয়ে মজা করেছে এটা সজীব কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সজীব এরপর অনেকভাবে শিমুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। প্রচন্ড রকম ঘৃনা জন্মালো শিমুর প্রতি।


সজীব স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকমাস সময় লাগল। এত বছর শুধু শিমুর জন্যই অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায় নি সজীব। ভার্সিটির অনেক মেয়ে ছিল যাদের সাথে চাইলে প্রেম করতে পারত। কিন্তু সজীব মন থেকে কখনও শিমুকে ভুলতে পারে নি। আর সেই শিমু তাকে এত বড় আঘাত দিল। গল্পটা অসমাপ্ত রেখেই তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটল।



সজীব আর শিমুর সম্পর্কের ইতি ঘটলেও " তুমি এসেছিলে বলে..." গল্পের সূচনা কিন্তু এখান থেকে। শিমুর প্রস্থানে গল্পটিতে আগমন ঘটেছে এক মিষ্টি চরিত্রের। যার আগমন না ঘটলে হয়ত এই 

"তুমি এসেছিলে বলে..." গল্পটি রচনাই হত না। সে মিষ্টি চরিত্রটি আর কেউ নয় এই গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র, গল্পের নায়িকা।


১২তম পর্ব 


সজীব যে চাচার সাথে মেচে থাকত তিনি ইতিমধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাই তিনি মেচ ছেড়ে দিয়ে নতুন ফ্যামিলি বাসা নিয়েছেন। তিনি চাইলে সজীবকে অন্য মেচ ঠিক করে দিতে পারতেন। কিন্তু সজীবকে তিনি এত বেশি পছন্দ করতেন যে সজীবকে উনাদের সাথে সাবলেট থাকতে প্রস্তাব দিলেন৷ সজীবও আর না করতে পারল না। সজীব নতুন বাসায় স্থানান্তর হল। নতুন বাসাটি সামিরের বাসা থেকে কিছুটা দূরে হলেও হেটে যাওয়ার মত।


সজীদের নতুন বাসাটি তিন তলায়। পাশের প্লটটি খালি তারপর আরেকটা নতুন বিল্ডিং উঠেছে যার দু'তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। সজীবদের নতুন বাসার বেলকনি বরাবর তাদের বাসার গলি। অর্থাৎ গলি দিয়ে কেউ আসলে তা তাদের বেলকনি থেকে দেখা যায়। 


সজীব আর সামির যে পুকুর পাড়ে বসে আড্ডা দেয় সেটা সজীবদের নতুন বাসার কাছাকাছি। তাই সামির বিকেল বেলা সজীবদের বাসার দিকে আসে তারপর দুজনে একসাথে হাটতে বের হয়। এভাবেই চলছে তাদের দিনগুলো। 


একদিন সজীব বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফিল্টার থেকে পানি ঢালছে এমন সময় তার চোখ পড়ল পাশের বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলার ছাদে। অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী এক তরুণী তাকিয়ে আছে দূর আকাশ পানে। সজীব যেন চোখ ফেরাতেই পারছেনা। পানি পান করতে করতে কখন যে পানির সাথে একটা পোকাও খেয়ে ফেলেছে পরক্ষণে তা টের পেয়েছে।

সজীব মনে মনে ভাবছে এর আগে তো একে কখনও দেখিনি। কে এই মেয়ে? তাকিয়ে থাকতে বেশ ভালই লাগছিল কিন্তু এদিকে সজীবের টিউশনির সময় হয়ে গেল বলে চলে গেল। 

ঐদিন রাতে সজীব যখন জানালার পাশে পড়তে বসল তখন দেখল দু'তলা বাড়িটির নিচতলায় আলো জ্বলছে। সজীব মনে মনে ভাবতে লাগল কিরে এতদিন তো এ বাসায় কোন আলো ছিল না। তাহলে নিশ্চয় কি নতুন ভাড়াটিয়া আসছে নাকি ঐ বাড়ির মালিক।

যাহোক ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখল বিকেলবেলার ছাদের সেই মেয়েটি। দেখে যেন অন্য রকম অনুভূতি হল। সজীবের পড়ার টেবিল ভিতরে হলেও সে মাঝে মাঝে ডাইনিং টেবিলে পড়তে বসত। কিন্তু যেদিন থেকে ঐ মেয়েটিকে দেখল সেদিন থেকে নিয়মিত ডাইনিং টেবিলে পড়তে বসা শুরু করল। ডাইনিং টেবিল থেকে ঐ বাসার মেয়েটিকে পুরোপুরি দেখা না গেলেও মাঝে মাঝে হাটতে দেখা যায়। সজীব কিছুক্ষণ পর পর তাকাতে থাকে যদি একটু দেখা যায়। 

এভাবে কয়েকটা দিন চলে গেল। মেয়েটি কিন্তু সজীবকে খেয়াল করেনি। খেয়াল না করারই কথা কারণ মেয়েটির বাসা ছিল নিচতলায়। একদিন মেয়েটির মা সজীবকে দেখল ঐ দিকে তাকিয়ে থাকতে। মেয়েকে ডেকে বলল," দেখ দেখ ছেলেটা প্রায় এদিকে তাকিয়ে থাকে।" মেয়েটি মনে করছে হয়ত এমনি এমনি তাকায় আরকি। এরপর থেকে মেয়েটিও খেয়াল করতে শুরু করল।

মেয়েটি যখনি জানালার পাশে আসে তখনি একবার উকি মেরে দেখে। সজীব টিউশনি শেষ করে বাসায় আসতে না আসতে জানালা দিয়ে উকি মারে মেয়েটিকে একবার দেখার জন্য। তারপর পড়তে বসে ডাইনিং টেবিলে যাতে করে মেয়েটি আসলে দেখতে পায়। একদিন দুজনের মুখোমুখি হয়ে গেল। যদিও কেউ কাউকে দূর থেকে ভাল করে চেহারা দেখতে পারছে না তারপরও একজন যে আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে। মেয়েটি কিছুক্ষণ পর পর এসে একটু উকি মেরে যায়। সজীবও সেটা খুব উপভোগ করতে শুরু করল।

১৩তম পর্ব

একবার সজীবের ক্লাস টেস্ট ছিল৷ সজীব প্রস্তুতি হিসেবে রাতে বসে বসে যেটার পরীক্ষা হবে সেটা নোট করল পরে পড়বে বলে কিন্তু জানালার সেই মেয়েটিকে দেখতে দেখতে নোট করা হল ঠিকই কিন্তু ভাল করে শিখা হল না৷ 

পরবর্তি দিন যথারীতি ভার্সিটি গেল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। ক্লাস টেস্ট শুরু হল। সজীব ইচ্ছে করে পিছনেই বসছে৷ একটু খানি লিখার পর আর কিছুই মনে আসছে না। হঠাৎ কু-বুদ্ধির উদয় হল। গতকাল যেটা নোট করছে সেটাই চালিয়ে দিবে। 

তারপর ব্যাগ থেকে আস্তে আস্তে পেইজগুলো বের করল। কিন্তু ম্যাম পিনআপ করা যে কাগজ দিয়েছে সেটাতে লিখা হয়ে যাওয়ার কথা তাহলে অতিরিক্ত পেইজ কিভাবে এড করবে। তারপর বুদ্ধি করল পিনটা খুলে ওরগুলো যোগ করে দিবে। পিন কিন্তু একটা। তাই সাবধানের সাথে আস্তে আস্তে খুলতে লাগল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস পিনের খোঁচা লেগে আঙ্গুলের মাথা থেকে রক্ত বের হয়ে খাতায় লেগে গেল। যাহোক অনেক কষ্ট করে একটা পিন দিয়ে তার অতিরিক্ত কাজগুলো যোগ করে দিল। পরীক্ষা শেষ হল সবাই উত্তরপত্র জমা দিয়ে দিল। ম্যাম সেগুলো নিয়ে অফিসে চলে গেল। 

আধা ঘণ্টা পরে ম্যাম আবার সবাইকে ক্লাসে আসতে বলল। সজীব তো ব্যপারটা বুঝে গেল। ম্যাম প্রথমে সজীবের উত্তরপত্র হাতে নিল। হাতে নিয়ে সবাইকে উচু করে দেখাল আর জিজ্ঞেস করল, " Have you seen any sign of blood?" সবাই একসাথে বলে উঠল "yes, mam"। 

ম্যাম তো রেগেমেগে আগুন সজীবকে ইচ্ছেমত বকাঝকা শুরু করল। আমি পাতা দিলাম দুটো করে আর তোমার এখানে পাতা এতগুলো কেন। নিশ্চয় তুমি অতিরিক্ত খাতা যোগ করেছ আর তা করতে গিয়ে পিনের খোচায় রক্ত বের হয়েছে। ম্যাম গর গর করে সব বলতে লাগল।আর ফেল করিয়ে দিবে বলে শাসিয়ে গেল। সজীবের খুবই ভাল একজন বন্ধু ছিল হাসান মাহমুদ। সবাই সজীবকে নিয়ে হাসাহাসি করলেও হাসান মাহমুদ তা করেনি।

 সে একদৌড়ে সজীবকে নিয়ে ম্যামের পিছনে পিছনে গেল। ম্যাম কিছুতেই কথা বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু হাসান মাহমুদ ও কম না। সে কথা বার্তাই ছিল অত্যন্ত পটু এবং সাহসী। সবাই তাকে "ক্যাম্পাস বয়" বলে ডাকত। কারণ ক্লাস করুক বা না করুক ক্যাম্পাসে তাকে পাওয়া যাবে। 

সে ম্যামকে মেনেজ করে ফেলল সজীব আর কখনও এমনটা করবে না। যাহোক ম্যাম মাহমুদ এর কথায় এ যাত্রায় সজীবকে মাপ করে দিল। এই ঘটনাটি সজীবের ভার্সিটি লাইফে সবচেয়ে Horror ও Funny ঘটনা ছিল।

বাসায় এসে সজীব আর জানালার দিকে না গিয়ে মন খারাপ করে বাসায় শুয়ে রইল। কারণ মেয়েটির উপর আজানা এক অভিমান তৈরি হল। এদিকে মেয়েটি বারবার জানালা দিয়ে এসে দেখে ছেলেটিকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু সেদিন সজীব আর জানালার পাশে যায় নি।

পরবর্তী দিন কিছুটা অভিমান কমলো। সজীব জানালা দিয়ে তাকাতে দেখল মেয়েটি স্কুল ড্রেস পরে বের হচ্ছে। স্কুল ড্রেস দেখে সজীবের আর বুঝতে বাকি রইল না মেয়েটি কোন স্কুলে পড়ে। এর আগে কখনও স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় দেখে নাই। 

যাহোক স্কুলে পড়ে, এটা বুঝতে পেরে সজীব ক্যালকুলেশন করে ফেলল কখন মেয়েটি স্কুলে যায় আর কখন স্কুল থেকে আসে। সজীবের ভার্সিটি সকালে হওয়াতে সে তাড়াতাড়ি চলে যায় ঐ দিকে ২ টার ভিতরে বাসায় চলে আসে। তাই সে সুযোগ পেল বিকেল ৪ টায় মেয়েটির স্কুল ছুটির সময় তাকে দেখার।

সজীব বিকাল ৪ টা বাজলে বেলকনিতে এসে দাড়ায় যাতে মেয়েটি গলি দিয়ে আসার সময় তাকে দেখতে পায়। কয়েকদিন পর মেয়েটিও বুঝতে পারল যে ছেলেটি তার জন্য বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে থাকে।  


১৪তম পর্ব


সজীব সামিরকে মেয়েটির কথা জানাল। সামিরও মেয়েটিকে দেখতে চাইলো। একদিন মেয়েটি স্কুল থেকে যে পথে আসে দুজনে সে পথের একটা চায়ের দোকানে বসে বসে চা পান করছিল। আর অপেক্ষা করছিল কখন আসবে মেয়েটি। ৪টা বাজতেই স্কুলের  ছেলে মেয়েরা বের হতে শুরু করল। এত ছেলে মেয়ের ভিড়ে বুঝতেই পারল না কখন মেয়েটি চলে গেল। যাহোক সেদিন আর দেখা হল না মেয়েটিকে সামিরের। একদিন সজীবের বাসার সবাই বেড়াতে গেল। সজীব সামিরকে বলল বাসায় আসার জন্য। সামিরও দেরি না করে বাসায় চলে আসল। তারপর জানালা দিয়ে মেয়েটিকে দেখাল৷ সামিরও বুঝতে পারল মেয়েটি যে বারবার এসে উকি মারছে। 


পরেরদিন দুজনে প্ল্যান করল আর স্কুলের ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে বাসার সামনে দাড়াবে। কারণ মেয়েটি বাসায় যেতে হলে সজীবদের বাসার সামনে দিয়ে যেতে হবে। অবশেষে মেয়েটি গলি দিয়ে আসতেই সজীব সামিরকে বলে উঠল ঐ যে আসছে। মেয়েটি ওদেরকে দেখে মাথা নিচু করে চলে গেল৷  এত কাছ থেকে দেখার আর সাহস হয়নি সজীবের। সামির থাকায় সাহস করে দাঁড়িয়ে ছিল। সামির মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ হল। সজীবকে বলল দোস্ত তোমার পছন্দ বেশ।


এভাবে প্রতিদিন চলতে লাগল। তবে বাসার নিচে দাড়ানোটা বন্ধ করে দিল আসেপাশের সবার চোখে 

পরার ভয়ে৷ এরপর থেকে স্কুলের সামনে চলে যেত আর পিছনে পিছনে আসত৷ মেয়েটিও সবকিছু টের পেতে শুরু করল। ছেলে দুইটা যে তাকে ফলো করে সে তা বুঝতে পারল। তাই মাঝে মাঝে পিছনে ফিরে ফিরে দেখত।


এখন রাতেও দুজনের দেখাদেখি হতে লাগল। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে সজীবের চাচা অনেক গল্পগুজব করত সজীবের সাথে। আর সজীব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেগুলো শুনত যাতে মেয়েটিকে ভাল করে দেখা যায়। আর সজীবের চাচা মনে করত সজীব উনার কথাগুলো শোনার বেশ আগ্রহ। যাহোক সজীবের চাচা ঘুমাতে গেলে সে আরও অনেকক্ষণ পড়ার নাম করে বসে থাকত। মেয়েটির বাসার আলো যতক্ষণ নিভতো না সজীবও ততক্ষণ ঘুমাতো না। 


এভাবেই শুরু হলো তাদের ভাব বিনিময়। কারও সাথে কারও কোন কথা না হলেও মনে হয় অনেক ভাবের আদান প্রদান হচ্ছে। ভাললাগা বুঝি এমনি হয়। 


একদিন সকালে সজীব ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হওয়ার সময়  জানালা দিয়ে তাকাতে দেখল মেয়েটিও বের হচ্ছে। কিন্তু সজীব হিসাবটা মিলাতে পারল না এত সকালে মেয়েটি কোথায় যাচ্ছে? একদৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখল মেয়েটি গলি দিয়ে বের হয় কিনা। গলি দিয়ে বের হতেও দেখল না। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে মেয়েটি। মেয়েটিকে দেখে সজীবতো অবাক। মেয়েটির ঘা ঘেষে নিচে গেল। আর মেয়েটি একটু মুচকি হেসে উপরের দিকে উঠে গেল। সজীব এবার বুঝতে পারল মেয়েটি নিশ্চয় প্রাইভেট পড়তে ওদের বিল্ডিং এ এসেছে। কারণ ওদের স্কুলের একজন শিক্ষক সজীবদের একই বিল্ডিংয়ের ৫ তলায় থাকে এবং তিনি ব্যাচ পড়ান। 



১৫ তম পর্ব


সজীব মনে মনে ভাবতে লাগল এবার আরও সুযোগ হল মেয়েটিকে দেখার। এখন থেকে সজীব প্রতিদিন হিসেব করে বের হয় যাতে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মেয়েটিকে দেখতে পায়। কিন্তু মাঝে মাঝে মেয়েটির বান্ধবীরা সহ একসাথে উঠার কারণে সজীব লজ্জায়  তাকাতেও পারে না। সজীব তাকে দেখতে পারুক বা না পারুক মেয়েটি যেন তাকে দেখতে পায় সেজন্য প্রতিদিন ঐ সময় সে বের হয়। মেয়েটি তার পাশ দিয়ে গেলেও যেন অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মেয়েটির আবার স্কুল ছুটি হতে না হতে সজীব ভার্সিটি থেকে চলে আসে আর মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মাঝে মাঝে সামিরকে নিয়ে স্কুলের ঐ দিকে যায়, না হয় একা একা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। মিষ্টি মিষ্টি অনূভুতিগুলো দিন দিন সজীবকে আরও গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন এক বোবার স্বর্গের প্রেম কাহিনী। 


যেদিন সজীব মেয়েটিকে কোন ভাবে দেখার সুযোগ হয় না সেদিন মেয়েটির বাসার ঐ দিক দিয়ে একটা গলি আছে যদিও সেদিক দিয়ে মানুষের চলাচল কম তারপরও সজীব সেদিন ঐ দিক দিয়ে বাসায় আসবে যাতে এক পলক তাকে দেখতে পায়। জানালা দিয়ে একটুখানি দেখে এক দৌড়ে চলে আসে। 


একদিন হঠাৎ মেয়েটির বাসায় একটা নতুন মেয়ে দেখতে পায়। রাতে যখন পড়তে বসল তখন জানালা দিয়ে তাকাতে দেখল মেয়েটি ঐ নতুন মেয়েটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর মনে হয় সজীবকে নিয়ে কিছু বলছে। সজীব আর লজ্জায় ঐ দিকে তাকাতে পারছে না। ওরা কি ভাল না খারাপ কমেন্ট করছে সেটা নিয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল। পরের দিন আবার যখন টিউশনি যাওয়ার জন্য বের হল তখন আবার তাদের সাথে দেখা।  সজীব তাদের দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় মেয়েটি বলে উঠল, "আন্টি,আন্টি, আমাদের পাশের বাসার সেই ছেলেটা। " সজীব আর পিছনে না থাকিয়ে দ্রুত চলে গেল। সজীব বুঝতে পারল মেয়েটির আন্টি মনে হয় তাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। এভাবেই চলতে লাগল সজীবের মিস্টি মিস্টি অনুভূতির দিনগুলো। 


হঠাৎ একদিন সজীবের চাচা বলল আগামী ডিসেম্বরের শেষে আমরা বাসা পরিবর্তন করব।সজীবের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাথে সাথে পাশের বিল্ডিং এর মেয়েটির কথা মনে পড়ল। সবে মাত্র একটু ভাব জমে উঠেছে তার মধ্যেই বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠল। 


১৬ তম পর্ব 


সজীব আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে ঐ দিন রাতে মেয়েটিকে হাতে ইশারা করল। প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করল। পরে দেখল মেয়েটিও ইশারার জবাব দিচ্ছে। এবার একটু সাহস পেল। কিন্তু কারো কথা কেউ শোনার জন্য জোরে বলার সুযোগ নেই। সজীব বুদ্ধি করে হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মাধ্যমে কানে ধরে ফোন নাম্বার চাইল। মেয়েটি ভাল করে বুঝতে পারছে না সেটা ইশারার মাধ্যমে বুঝালো। কয়েকবার চেষ্টার পর বুঝাতে পারল ফোনের কথা। মেয়েটি ইশারায় বুঝালো তার নিজের কোন ফোন নেই। 

সজীব কি করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ খেয়াল হল নিজেরটা তো দেয়া যায়। এবার ইশারায় খাতা কলম আনতে বলল। মেয়েটিও এক দৌড়ে খাতা কলম নিয়ে আসল। এবার নাম্বার লিখতে বলল। সজীব হাতের ইশারায় এক এক করে নাম্বার দেখাতে লাগল। আর মেয়েটিও লিখতে শুরু করল।

সজীব নাম্বার বুঝাতে বুঝাতে রীতিমত ক্লান্ত হয়ে গেল। সজীব নাম্বার দেওয়া শেষ করলেও মেয়েটি শেষ করতে পারেনি। মেয়েটি নাম্বার লিখতে পেরেছে দশটি। কি এক বিপদ! কোন সংখ্যাটা বাদ পরেছে কে কাকে কেমনে বুঝাবে। তারপরও সজীব আবার প্রথম থেকে শুরু করল আর মেয়েটিও মিলাতে শুরু করল। ঘুরে ফিরে একটা ডিজিট বাদ পরে যাচ্ছে। মেয়েটি শেষ পর্যন্ত না পেরে বলে দিল ঠিক আছে। সজীব মনে করছে সত্যি সত্যি । 

যাহোক আজকের মত নাম্বার দেওয়া-নেওয়ার মিশন শেষ হল। তারপর হাতের ইশারায় একজন আরেকজনকে বিদায় জানিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। সেদিন রাতে সজীব কোন মতেই ঘুমাতে পারছে না। দুজনের ইশারায় এই প্রথম কথা হলো। 

পরের দিন থেকে সজীব অপেক্ষা করতে লাগল নতুন কোন নাম্বার থেকে কল আসে কিনা৷ নতুন নাম্বার দেখলেই সজীব খুব উচ্ছ্বসিত হত। কিন্তু সেই নতুন নাম্বারের একটাও কাঙ্ক্ষিত নাম্বার ছিল না। সজীব আরও অপেক্ষা করতে লাগল। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হতে লাগল। কিন্তু সেই মেয়েটির কোন কল আসে না।

রাতে আবার ইশারায় জিজ্ঞেস করল ফোন করে নাই কেন? মেয়েটি বলল নাম্বার লিখতে পারে নাই। সজীব আবার লিখতে বলল। কিন্তু মেয়েটি গত কালের ক্লান্তির কথা মনে করে আর লিখতে রাজি হল না। সজীব হতাশ হয়ে পড়ল। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এর মধ্যে নাম্বার পৌঁছাতে না পারলে আর হয়ত মেয়েটির সাথে কখনও যোগাযোগ হবে না। 

পরে চিন্তা করল একটা কাগজে লিখে স্কুল থেকে আসার সময় দিলে কেমন হয়। যেই চিন্তা সেই কাজ। একটা ভিজিটিং কার্ডের পিছনে নাম্বার লিখল। কার্ডটা নিয়ে বিকেল ৪টায় বের হল। মেয়েটিরও আসার সময় হল। সজীব নিজেদের বিল্ডিং এর নিচে সিড়ি ঘরে দাড়িয়ে আছে। 

কিছুক্ষণ পর গলি দিয়ে মেয়েটি আসতে লাগল। মেয়েটিকে দেখে সজীব এর হার্টবিট বেড়ে গেল। যত কাছে আসছে তত হাত পা কাঁপতে শুরু করল। মেয়েটিও কিছু না বলে চলে গেল। যদিও রাতে ইশারায় কথা হয়। কিন্তু দিনের বেলায় সামনা সামনি লজ্জায় কেউ কারোও দিকে তাকাতেও পারে না। সেদিন আর কার্ডটা দেওয়া হল না। এভাবে আর দু একদিন চেষ্টা চালিয়ে গেল। কিন্তু কোন মতে সাহস করে কার্ডটা দিতে পারল না। কারণ মেয়েটি কাছে আসলেই হার্ট বিট এত বেড়ে যায় তখন আর কোন কিছুই খেয়াল থাকে না।

কি করবে? কিভাবে কার্ডটা দিবে কোন মতেই বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে যাওয়ার সময় খুব কাছে চলে আসছে। শেষ পর্যন্ত সামিরের শরণাপন্ন হল। সামিরকে সব খুলে বলল। সামির আবার একটু সাহসী। সে বলল আচ্ছা ঠিক আছে। আজ বিকেলে আমি ওকে কার্ডটা দিব। বিকেল ৪ টা বাজতেই দুজনে হাজির। সিঁড়ির ঘরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটির অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আসতে লাগল। সজীবের আজকে আগের চেয়েও হার্টবিট বেড়ে গেল। কি থেকে কি হয়ে যায় আবার। সামির সিঁড়ির ঘর থেকে বের হল। হাতে নাম্বার সম্পৃক্ত কার্ড। সামির মেয়েটির দিকে কার্ড বাড়াতেই মেয়েটি ভয়ে এক দৌড়। কার্ডটি আর দেওয়া হল না।

আর মাত্র বিশ দিন বাকি। নাম্বার না দিতে পারলে আর হয়ত কখনও যোগাযোগই হবে না। সজীব সিদ্ধান্ত নিল যেভাবে হউক নাম্বারটা তাকে দিতেই হবে। মনের মধ্যে সাহসের সঞ্চার হল। পরের দিন একা একা কার্ডটি নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটির অপেক্ষায়। মেয়েটি স্কুল ছুটির পর যথাসময়ে আসতে লাগল। হার্টবিটটা বেড়ে গেলেও আজ আর ভয় কাজ করছে না। মেয়েটি কাছে আসতেই হঠাৎ কন্ঠ ভারী হয়ে গেল। ভারী কন্ঠে মেয়েটিকে কার্ডটি এগিয়ে বলল," এটা নিয়ে যাও"। মেয়েটি না নিয়ে প্রথমে সামনে চলে গেল আবার পিছনে এসে সজীবের হাত থেকে কার্ডটি নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল।


অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস। নাম্বারটা তো শেষ পর্যন্ত পৌছানো গেল। এবার অপেক্ষার পালা কখন কল আসবে। 

সজীব প্রতিদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন কল আসবে। কিন্তু সজীব জানত না যে মেয়েটির নিজের কোন মোবাইল নেই। সে মেয়েটিকে রাতে ইশারায় জিজ্ঞেস করত কল কেন দিচ্ছে না? মেয়েটিও ইশারায় বলল পরে দিবে।


অবশেষে দু দিন পর এক বিকেলে সজীববের মোবাইলে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল আসল। সজীব রিসিভ করে সালাম দিল। ভারী মিষ্টি কন্ঠে সালামের উপর দিয়ে বলল আপনি কেমন আছেন? 


সজীব : আলহামদুলিল্লাহ  ভাল। তুমি কেমন আছ?

মেয়েটি : আলহামদুলিল্লাহ ভাল। কিন্তু আপনি কি আমাকে চিনছেন? 

সজীব : হ্যাঁ। তুমি উর্মি (সামিরের কাজিন) না।

মেয়েটি : না তো। কেন উর্মি নামের কেউ কি ফোন দেওয়ার কথা ছিল নাকি?

সজীব : আসলে তা না। কন্ঠটা আমার খুব পরিচিত মনে হয়েছে তো তাই।

মেয়েটি : ও আচ্ছা। জানতে পারি সেই পরিচিত কন্ঠটা কার? 

সজীব : জ্বি। আমার এক বন্ধুর কাজিনের। 

মেয়েটি : তো উনি আপনাকে কেন কল করবে?

সজীব : আচ্ছা আপনি যদি উর্মি না হন তাহলে কে? আর আমি আপনাকে এত কথা বলতে যাব কেন?

মেয়েটি : না মানে। আপনি কল রিসিভ করেই উর্মির কথা বলে যাচ্ছেন তাই মনে করলাম উনি আপনার বিশেষ কেউ।

সজীব : না।  উনি আমার বিশেষ কেউ না। আমার থেকে কন্ঠটা শুধু ওর মত মনে হল তাই বললাম। 

মেয়েটি : সরি সরি। আচ্ছা আপনার নাম কি?

সজীব : কি! আপনি আমাকে চিনেন না তাহলে কল দিলেন কেন?

মেয়েটি : আমি আপনাকে চিনি কিন্তু নাম জানিনা?

সজীব : মানে। আপনি আমাকে চিনেন অথচ নাম জানেন না। আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? 

মেয়েটি : কেন?  আপনি তো দিলেন একটা কার্ড এর মধ্যে এই নাম্বার। কিন্তু কোন নাম লিখা ছিল না।(সজীব স্তব্ধ হয়ে গেল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।)

মেয়েটি : কি চুপ করে আছেন যে। কথা বলছেন না কেন?

সজীব : এটা আপনি! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এই কয়টা দিন শুধু আপনার কলের অপেক্ষায় ছিলাম।

মেয়েটি : সত্যিই! কিন্তু কার্ড এ আপনার নাম দিলেন না কেন?

সজীব : ভাবলাম কার্ডে নাম দিলে হয়ত আপনি আমাকে কল দিবেন না। নাম না থাকলে অন্তত নাম জানার জন্য হলেও কল দিবেন। সেজন্যে 

মেয়েটি : আপনি তো বেশ চালাক। তো এখন বলেন আপনার নাম কি?

সজীব : আমার নাম সজীব। আপনার? 

মেয়েটি : আমার নাম তো বলা যাবে না। 

সজীব : কেন?

মেয়েটি : এমনি।

সজীব : কিন্তু কথা তো বলা যাবে? 

মেয়েটি : যাবে। তবে আমি যখন কল দিব তখন। কারণ এটা আমার আম্মুর নাম্বার।

সজীব : আচ্ছা।  ঠিক আছে। 

মেয়েটি : আচ্ছা এখন রাখি আম্মু আবার দেখে ফেলবে।

সজীব : আচ্ছা। ভাল থাকবেন।

মেয়েটি : আপনিও। 






Comments

  1. এত অপেক্ষার পর পর্ব গুলো এতো ছোট কেন স্যার,পরবর্তী পর্ব গুলো একটু বড় করবেন।

    ReplyDelete

Post a Comment